সংকট মোকাবেলায় নীরব সিনিয়র নেতারা
তরফ বার্তা
প্রকাশের সময় : জুলাই ২৩, ২০২২, ৪:১৯ পূর্বাহ্ন /
০

সুস্পষ্টভাবেই সরকার একটি অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে পড়েছে। আর এই অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলার জন্য প্রধানমন্ত্রী বারবার করে মিতব্যয়ী হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন, জনগণকে কৃচ্ছতা সাধনের জন্য অনুরোধ জানাচ্ছেন। এর মধ্যে সরকার বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। সরকারি অফিস-আদালতগুলোতে বিদ্যুৎ সাশ্রয়, অনলাইনে মিটিংসহ বিভিন্ন রকম সুপারিশ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সরকার রুটিন করে লোডশেডিংয়ের সময়সূচী ঘোষণা করছে। কিন্তু এই সমস্ত পরিস্থিতি একটি রাজনৈতিক সরকারকে স্বস্তি দিতে পারছে না। বরং জনগণ ক্রমশই বিদ্যুৎ সংকট নিয়ে অস্থির হয়ে উঠছে। তারা বিভিন্ন রকম হতাশার কথাও এখন শোনাচ্ছেন। এরকম পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক সংকট নিয়ে জনগণকে আশ্বস্ত করা, জনগণের পাশে দাঁড়ানো এবং জনগণকে বাস্তবতা তুলে ধরাটি একটি রাজনৈতিক সরকারের দায়িত্ব। আর এই তুলে ধরার কাজটি করতে হবে রাজনীতিবিদদেরকেই। কিন্তু সরকার যেভাবে সংকটের সমাধান করছে, সেভাবেই রাজনীতিবিদরা সংকট সমাধানে এক ধরনের নীরবতা পালন করছেন। আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট সিনিয়র নেতারা বর্তমান বৈশ্বিক সংকট এবং সেই বৈশ্বিক সংকটের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের সংকট নিয়ে কোনো কথা বলছেন না। তারা এক ধরনের নীরবতাই অবলম্বন করছেন।
আওয়ামী লীগের অন্যতম হেভিওয়েট নেতা আমির হোসেন আমু। তিনি এখন ১৪ দলের সমন্বয়কও বটে। ১৪ দল সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে টুকটাক কথাবার্তা বলছে। নড়াইলে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনায় নিয়েও ১৪ দলের পক্ষ থেকে কথাবার্তা বলা হয়েছে। কিন্তু বর্তমান অর্থনৈতিক সংকট এবং এই সংকট মোকাবেলায় সরকারের পদক্ষেপ গুলো নিয়ে জনগণকে বোঝানোর কাজে ১৪ দল বা ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমুকে সক্রিয় দেখা যাচ্ছে না।
আওয়ামী লীগের আরেকজন হেভিওয়েট নেতা তোফায়েল আহমেদ। অসুস্থতার পর এখন অনেকটাই নীরবতা অবলম্বন করছেন। জাতীয় সংসদের সর্বশেষ অধিবেশনে তিনি উপস্থিত ছিলেন, বক্তৃতাও দিয়েছেন কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে তার কোনো বক্তব্য, বিবৃতি কারো চোখে পড়েনি।
শেখ ফজলুল করিম সেলিম আওয়ামী লীগের আরেকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা। তিনিও বর্তমান পরিস্থিতিতে এক ধরনের নীরবতা অবলম্বন করছেন। তাকেও খুব একটা কথাবার্তা বলতে দেখা যাচ্ছে না।
বেগম মতিয়া চৌধুরী বর্তমান সরকারের মন্ত্রিসভায় না থাকলেও তিনি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথাবার্তা বলেন। এমনকি তিনি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে বিভিন্ন রাজনৈতিক বক্তব্য রাখেন। কিন্তু দেশে যে বর্তমানে বিদ্যুৎ সংকট এবং অর্থনৈতিক সংকট, এই সংকট নিয়ে প্রকৃত অবস্থা তুলে ধরার ক্ষেত্রে বেগম মতিয়া চৌধুরীও এক ধরনের মৌনব্রত অবলম্বন করছেন।
এরপরের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মধ্যে ওবায়দুল কাদের কথা বলছেন। কিন্তু তিনি যতটা না জনগণকে আশ্বস্ত করেছেন, তার চেয়ে তিনি বেশি বিরোধী দলের সমালোচনা করছেন। ওবায়দুল কাদের, ড. হাছান মাহমুদসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ কথা বলছেন বটে, তবে সবই বিরোধী দলের সমালোচনাসূচক। রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করছেন যে, এই সংকটটি সরকারের সৃষ্ট সংকট না, বৈশ্বিক সংকটের একটি অংশ। এই সংকটে যে সরকারের কোনো দায় নেই বা পুরো বিশ্বেই যে এই সংকট চলছে, এই কথাগুলো মানুষের কানে পৌঁছাতে হবে এবং এই পৌঁছানোর জন্যই দরকার রাজনৈতিক বক্তব্য। কিন্তু দলের সিনিয়র নেতারা এই সময় কেন নীরবতা অবলম্বন করছেন, এটি নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা প্রশ্ন হচ্ছে। বিভিন্ন মহল বলছে যে, শুধু বর্তমান সময় না, বিভিন্ন সংকটেই দেখা গেছে যে, দলের সিনিয়র নেতারা সংকটের সময় হাত-পা গুটিয়ে থাকেন, তারা কথাবার্তা কম বলেন। কেন এটি হয়, এটি রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি বড় প্রশ্ন। এর আগেও করোনা সংকটের সময় দেখা গেছে, সিনিয়র নেতারা নীরব ছিলেন। ২০১৩ সালের রাজনৈতিক সংকটেও সিনিয়র নেতাদের ভূমিকা ছিলো প্রশ্নবিদ্ধ। এবারও আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা কেন নীরবতা পালন করছেন, সেটিও একটি প্রশ্ন বটে। এটি দলের তৃণমূলের মধ্যে নানারকম প্রশ্ন এবং জিজ্ঞাসা তৈরি করেছে।
আপনার মতামত লিখুন :