এক মাসেরও বেশি সময় আরাকান আর্মির সঙ্গে ধরে লড়াই হচ্ছে দেশটির নিরাপত্তাবাহিনীর।বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু বাজারের দক্ষিণের উঁচু পাহাড়টি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের।
দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী ‘আরাকান আর্মির’ যুদ্ধ চলছে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের জেলা শহর মংডুর আশপাশের এলাকায়। মংডু শহরে দিনের বেলা সৈন্য সমাবেশ ঘটিয়ে শক্তি প্রদর্শন করে, রাতের আঁধারে হেলিকপ্টারে সীমান্ত এলাকায় গুলি ও মর্টারের গোলা নিক্ষেপ করছে দেশটির সরকারি বাহিনী। আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে বাংলাদেশ সীমান্তের ঘুমধুম, পালংখালী ও হোয়াইক্যং এলাকার বাসিন্দারা গত দুই দিনের গোলাগুলিতে, ।
সীমান্ত সুরক্ষার দায়িত্বে সূত্র জানিয়েছে, গত দুই মাসের বেশি সময় ধরে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুমের তুমব্রু সীমান্তের বিপরীতে রাখাইন রাজ্যের ওয়ালিডং এবং খ্য মং সেক পাহাড়ে আরাকান আর্মির তুমুল লড়াই শুরু হয় দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে। দক্ষিণ দিকের জেলা শহর মংডু এবং তার আশপাশের এলাকায় দেড় মাস পর এ যুদ্ধের ব্যাপ্তি ছড়িয়েছে । দক্ষিণ মংডুর বুচিডং, রাচিডং এলাকায় উভয় পক্ষের বর্তমানে তুমুল লড়াই চলছে। ১২/১৪ দিন আগে ঘুমধুম সীমান্তের বিপরীতে রাখাইন রাজ্যের পাহাড়ে স্থাপিত বিজিপির একাধিক চৌকি আরাকান আর্মি দখলে নেয়। চৌকিগুলো পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছে এখন দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী। সড়কপথে দিনের বেলায় মংডু থেকে ঘুমধুমের দিকে চোরাগোপ্তা হামলার ভয়ে তারা অগ্রসর হতে পারছে না। যে কারণে হেলিকপ্টার থেকে গুলিবর্ষণের পাশাপাশি মর্টারের গোলা নিক্ষেপ করা হচ্ছে রাতের বেলায়।
ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বলেন, ১১ দিন বন্ধ থাকার পর গত রোববার রাতে হঠাৎ গুলিবর্ষণ ও মর্টারের গোলা নিক্ষেপ শুরু করে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী। গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে সাতটা পর্যন্ত গোলাগুলি চলে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এর মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল সাকিল আহমেদ গতকাল সকালে ঘুমধুম সীমান্ত পরিদর্শনে আসেন। সীমান্ত পরিদর্শন শেষে তিনি কক্সবাজার শহরে ফিরে গেলে বিকেল চারটার দিকে ওপারে বেশ কয়েকটি মর্টার শেলের শব্দ শোনা যায়। এপারের বাসিন্দারা গতকাল রাতেও ব্যাপক গোলাগুলির শব্দ শুনেছে ।
আতঙ্কিত হয়ে পড়ে গতকাল মধ্যরাত থেকে গোলাগুলি ও মর্টার শেলের বিকট শব্দে কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলার টেকনাফ, উখিয়া ও নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের ৩১ গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ। নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জামাল হোসেন বলেন, টানা আট ঘণ্টা মর্টার শেলের বিকট শব্দে গতকাল রাত আটটা থেকে ভোররাত চারটা পর্যন্ত ঘরবাড়ি কাঁপতে থাকে। গ্রামের নারী,পুরুষ,শিশু কারও চোখে ঘুম নেই টানা দুই মাস । ব্যাহত হচ্ছে লোকজনের স্বাভাবিক জীবনযাপন, কাজকর্ম । আতঙ্কে যেতে পারছে না শিক্ষার্থীরা স্কুল/মাদ্রাসায়। উখিয়ার পালংখালী ও টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের মানুষের ও একই অবস্থা । হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের বলেন, ঘুমধুম, পালংখালী ও হোয়াইক্যং সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের ঢেকুবনিয়া, বলীবাজার, কোয়ানচিমং ও নাইচাডং এলাকা। সেনা ও সীমান্তরক্ষী বিজিপি ছয়টির বেশি ব্যাটালিয়ন সেখানে স্থাপন করা হয়েছে। রাখাইন রাজ্যের জেলা শহর মংডুর অবস্থান নাইচাডংয়ের সাত থেকে আট কিলোমিটার দক্ষিণে । যুদ্ধের সবকিছু মংডুর সেনা সদর দপ্তর থেকে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে ।
আমদানি পণ্য নিয়ে টেকনাফ স্থলবন্দরে আসা দেশটির কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, গতকাল দিবাগত রাত দেড়টার দিকে মংডু টাউনশিপের ৪ নম্বর সেক্টরে মিলিটারি কাউন্সিল ও আরাকান আর্মির মধ্যে ব্যাপক যুদ্ধ হয়। সেখানে গোলাগুলিতে সিরাজ উদ্দিন নামের এক রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়েছে।
ব্যবসায়ীরা বলেন, ৬ অক্টোবর বিকেলে মংডুতে ৪টি জাহাজে ৬০০ সেনাসদস্য আনা হয়েছে । রাতে ঘুমধুম সীমান্তের কাছে ঢেকুবনিয়া, কোয়ানচিমং সেনা ব্যারাকে পাঠানো হয় ৩০০ জনকে। মংডুর বিজিপি সদর দপ্তরের ৫ নম্বর শাখায় বাকি ৩০০ জনকে রাখা হয়। পৃথক চারটি জাহাজে মংডুতে আনা হয় ৬০০ সেনাকে বিভাগীয় শহর আকিয়াব (সিথুয়ে) থেকে। সেন্ট মার্টিন দ্বীপের বিপরীতে মিয়ানমারের জলসীমায় অবস্থান করছে জাহাজগুলো তিন দিন ধরে। সীমান্তে বিজিবি সতর্ক আছে বলেন,টেকনাফ ২-বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল শেখ খালিদ মোহাম্মদ ইফতেখার । বিজিবি প্রস্তুত, অনুপ্রবেশসহ সীমান্তের যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায়।
আপনার মতামত লিখুন :