ইয়াসমিন বেগমের আর্তনাদ, আমাকে উদ্ধার করো বাবা।


তরফ বার্তা প্রকাশের সময় : অক্টোবর ৫, ২০২২, ৭:২০ অপরাহ্ন /
ইয়াসমিন বেগমের আর্তনাদ, আমাকে উদ্ধার করো বাবা।

সৌদির রিয়াদ থেকে যোগাযোগমাধ্যম ইমোতে ফোন করে, বাবা আমি আর নির্যাতন সহ্য করতে পারছি না, আমাকে উদ্ধার করো, দেশে নেয়ার ব্যবস্থা করো। এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন গৃহকর্মীর কাজ নিয়ে সৌদিতে যাওয়া ইয়াসমিন বেগম (১৯)।

হবিগঞ্জ মাধবপুর উপজেলার কমলপুর গ্রামের কুদ্দুস মিয়ার মেয়ে ইয়াসমিন বেগম গত ২৭ সেপ্টেম্বর গৃহকর্মীর কাজ নিয়ে সৌদিতে যান, ঢাকার আরামবাগস্থ শান ওভারসিজ নামের একটি রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে। মেয়েটির পরিবার এ বিষয়ে গত রোববার প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছে । ঐ অভিযোগ ও ইয়াসমিনের পরিবার সূত্রে জানা যায়, তিন দিন আগে ইমোতে তার বাবার সঙ্গে যোগাযোগ করেন ইয়াসমিন। এ সময় তিনি বলেন, তাকে নির্যাতন করা হচ্ছে সৌদির রিয়াদে আটকে রেখে । তিনি সহ্য করতে পারছেন না এ নির্যাতন। সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করার আকুতি জানান তার বাবাকে। ইয়াসমিনের পরিবারে এ ফোন পেয়ে অশান্তি নেমে আসে। পরিবারের সদস্যরা যোগাযোগ করেন সেই কাশেম মিয়ার সঙ্গে, (যে দালালের মাধ্যমে সৌদি গিয়েছিল)। কাশেমই ইয়াসমিনকে ঢাকার শান ওভারসিজের মাধ্যমে সৌদি পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু এখন বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছেন কাশেম।

ইয়াসমিনের বাবা কুদ্দুস মিয়া বলেন, রিয়াদের একটি নির্জন স্থানে আটকে রেখে তার মেয়েকে শারীরিক নির্যাতন করা হচ্ছে। যে কাজের কথা বলে নিয়ে যাওয়া হয়, সেই কাজ না দিয়ে নানা অবৈধ কাজে জড়িত করার চেষ্টা করছে ওরা। তার পরিবার রোববার প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দেয়ার কারণে দালাল কাশেম এখন কোনো দায়িত্ব নিতে চান না।

কমলপুর গ্রামের মুজাহিদ বলেন, ‘ইয়াসমিন আমার গ্রামের বাসিন্দা। এ ঠিকানায় তার জাতীয় পরিচয়পত্র থাকা সত্ত্বেও দালালেরা চুনারুঘাট উপজেলার একটি ঠিকানা ব্যবহার করে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করে সৌদিতে পাঠান। কী করে এ দালাল চক্র ঠিকানা পরিবর্ত করে পাসপোর্ট করল, তা নিয়েই অবাক !

এ বিষয়ে কাশেম মিয়ার কাছে জনতে চাইলে তিনি জানান, তিনি ঢাকার আরামবাগের শান ওভারসিজ রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে ইয়াসমিনকে সৌদিতে পাঠিয়েছিলেন। সেখানে ভালো আছেন ইয়াসমিন। সঠিক নয় তাদের অভিযোগ। শান ওভারসিজের কাছে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী এ বি এম শামছুল আলমকে মুঠোফোনে পাওয়া যায়নি। তবে তার প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা সুইটি আক্তার বলেন, ‘ইয়াসমিনকে আমরা দালালের মাধ্যমে পেয়েছি। আমাদের কাছে কাশেম নামের এক লোক তাকে নিয়ে আসেন। সৌদিতে যাওয়ার পরপই ইয়াসমিন জানায়, সেখানে কাজ তার ভালো লাগে না। নিজে থেকেই থাকতে চায় না ঐ মেয়ে। পরিবার চাইলে তাকে দেশে আনার চেষ্টা করব আমরা। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মাইনুল ইসলাম জানান, তিনি অভিযোগ পেয়েছেন। এ বিষয়ে অভিযুক্ত স্থানীয় দালাল কাশেমকে গতকাল মঙ্গলবার তার অফিসে ডেকে আনা হয় এবং সে স্বীকার করেছে, যে মেয়েটিকে তার মাধ্যমে সৌদিতে পাঠানোর হয়।

তাই মেয়েটিকে সেখান থেকে ফেরত নিয়ে আসতে তাকে সময়সীমা বেধে দেওয়া হয় । অন্যথায় তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা (কাশেমকে) জানানো হয়েছে।