আমলারা কিভাবে এত ক্ষমতাবান হচ্ছেন?


তরফ বার্তা প্রকাশের সময় : জুলাই ২৩, ২০২২, ১১:০২ অপরাহ্ন /
আমলারা কিভাবে এত ক্ষমতাবান হচ্ছেন?
আবার আমলাদের ক্ষমতা বেড়েছে, প্রশাসন দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে আমলারাই আবার মুখ্য ভূমিকায় এসেছে। এরকম এক পরিস্থিতির মধ্যে আজ জনপ্রশাসন দিবস পালিত হলো, সেখানে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে আমলারা পুরস্কৃত হলেন। আমলাদের এই পুরস্কার প্রদানের মধ্য দিয়ে আমলাতন্ত্রের কর্তৃত্বকে আরেকবার স্বীকৃতি দেওয়া হলে পর্যবেক্ষক মহল মনে করছেন। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ধারায় আমলাতন্ত্রের ভূমিকা কি হবে এ নিয়ে নানামুখী বিতর্ক রয়েছে। আমলারা কতটুকু ক্ষমতায় থাকতে পারবেন, কতটুকু দায়িত্ব পালন করবেন এ নিয়েও রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনা এবং বিতর্ক আছে। একটি রাজনৈতিক সরকারের চালিকাশক্তি হলো রাজনীতিবিদ এবং রাজনৈতিক দল। রাজনৈতিক দলের যে অভিপ্রায়, তার নির্বাচনী ইশতেহার এবং তার কর্মসূচি সেটি বাস্তবায়ন করে সরকার। আর এই বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সাচিবিক বা দাপ্তরিক সহায়তা প্রদান করেন আমলারা।
কিন্তু বাংলাদেশে গত কিছুদিন ধরে দেখা যাচ্ছে যে, আমলারা কেবল সাচিবিক দায়িত্ব পালন করছেন না বরং আমলারা রাজনীতিবিদদের চেয়েও বড় রাজনীতিবিদের এর ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। অনেকক্ষেত্রে তারা নীতিনির্ধারকের ভূমিকায়ও অবতীর্ণ হচ্ছেন। এর মধ্যদিয়ে আমলাতন্ত্রের কর্তৃত্ব, প্রভাব বেড়েছে এবং রাষ্ট্রপরিচালনায় আমলাদের ভূমিকা আগের চেয়ে অনেক বেশি দৃশ্যমান হচ্ছে। ২০২০ সালে করোনার প্রকোপ শুরু হওয়ার পর থেকেই আমলাদের ক্ষমতা বাড়তে শুরু করে। এসময় প্রথমবারের মতো জেলার দায়িত্বে সচিবদেরকে দেয়া হয়। জেলা প্রশাসকরা সরাসরি জেলার সার্বিক তত্ত্বাবধানের ক্ষমতা পান। এই দায়িত্বগুলো দেওয়া হয়েছিল একটি আপৎকালীন ব্যবস্থা হিসেবে কিন্তু এ দায়িত্ব দেয়ার পরপরই প্রশাসনের সঙ্গে জনপ্রতিনিধিদের নানারকম বিরোধের ঘটনা ঘটে। বিশেষ করে বিভিন্ন জায়গায় জনপ্রতিনিধি এবং প্রশাসনের বিরোধ প্রকাশ্যে রূপ ধারণ করে। ফরিদপুর এবং বরিশালের ঘটনাটি তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ। এই প্রেক্ষাপটে করোনার প্রকোপ যখন কমতে শুরু করে তখন আমলাদের ক্ষমতা এবং প্রভাব কিছুটা খর্ব হতে থাকে। রাজনৈতিক কর্তৃত্ব এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে রাজনীতিবিদদের ভূমিকাও ক্রমশ বাড়তে থাকে।
কিছু কিছু ঘটনায় রাজনীতিবিদদের সাফল্য আমলাদেরকে একটু কোণঠাসা করে। বিশেষ করে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংকট নিরসনে রাজনীতিবিদদের ভূমিকা এবং জেলা পরিষদের প্রশাসক নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে আমলা এবং রাজনীতিবিদদের টানাপোড়েনের মধ্যে শেষ পর্যন্ত রাজনীতিবিদদের আমলাতন্ত্রকে কিছুটা হলেও কোণঠাসা করেছিল। জেলা পরিষদের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর সেখানে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়ার কথা ছিলো। এটি ছিলো আমলাদের একটি কৌশল। যার ফলে জেলা প্রশাসকও তারা দখল করতে চেয়েছিল। কিন্তু রাজনীতিবিদরা পাল্টা প্রস্তাব হিসেবে জেলা পরিষদের বিদায়ী চেয়ারম্যানদেরকেই প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার প্রস্তাব দেব এবং শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী সেই প্রস্তাবটি গ্রহণ করেন। এর মাধ্যমে আমলাদের ওপর রাজনৈতিক সরকারের একটি বিজয় অর্জিত হয়।
কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে আবার আমলারা ড্রাইভিং সিটে এসেছেন। বিশেষ করে বিদ্যুৎ এবং অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় আমলাদেরকে দৃশ্যমান দেখা যাচ্ছে। আমলারা কিভাবে এত ক্ষমতাবান হচ্ছেন?  এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে দেখা যাচ্ছে যে প্রথমত, রাজনীতিবিদদের চেয়ে আমলাদের তাৎক্ষণিক কাজ করার দক্ষতা অনেক বেশি। আমলারা একটি সিদ্ধান্ত দ্রুত বাস্তবায়ন করতে পারছে যেখানে রাজনীতিবিদদের দীর্ঘসূত্রিতার মধ্যে পড়ছেন। দ্বিতীয়ত, রাজনীতিবিদরা অনেক কিছুই বুঝে উঠতে সময় নেন কিন্তু সেক্ষেত্রে আমলারা দ্রুত কাজটি করতে পারেন। তৃতীয়ত, রাজনীতিবিদদের অনেক বিষয় সম্বন্ধে জানা-শোনার রয়েছে, সেখানে আমলারা দ্রুত একটি বিষয় সম্বন্ধে নিজেদেরকে আত্মস্থ করে নিতে পারেন। চতুর্থত, রাজনীতিবিদদের একটি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করার ক্ষেত্রে যে প্রক্রিয়ায় সেই প্রক্রিয়ায় আমলারাই বড় অনুষঙ্গ। সেক্ষেত্রে অনেক সময় মন্ত্রীর সিদ্ধান্ত আমলারা বাস্তবায়ন করেন না। কিন্তু আমলাদেরকে কোনো কাজ দেওয়া হলে সেই কাজটি সরাসরি তারা তাদের নিজস্ব চেইনে করতে পারেন। সর্বশেষ, প্রধানমন্ত্রীর চাওয়া-পাওয়া, আকাঙ্ক্ষাগুলো বোঝার অক্ষমতা রাজনীতিবিদদের মধ্যে ক্রমশ দৃশ্যমান হচ্ছে, যেক্ষেত্রে আমলারা অনেকখানি সফল। আর এ কারণেই আমরা এখন অনেক বেশি ক্ষমতাবান হয়ে উঠেছেন বলেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।